ইফতারিতে রোজাদারদের পছন্দের খাবার হচ্ছে ছোলা ভাজা। এ জন্য রমজান উপলক্ষে প্রতিবছর ছোলার আমদানির ধুম পড়ে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি, রমজান উপলক্ষে ১৭টি দেশ থেকে ছোলা আমদানি করেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কোন কোন দেশ থেকে হচ্ছে সেটির ধারণা পাওয়া যায় চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার চিত্র দিয়ে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানির ৮২ শতাংশ আসে, আর রপ্তানি হয় ৯১ শতাংশ। আর আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাসে ছাড়পত্র দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের তথ্যমতে, রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ১৬ দেশ থেকে ছোলা আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া কিছু আমদানিকারক পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ছোলা আমদানি করেছেন। অর্থাৎ রমজান উপলক্ষে ১৭টি দেশ থেকে ছোলা আমদানি হয়েছে।
রোজা উপলক্ষে যত ছোলা আমদানি হয়েছে তার বেশির ভাগই আনা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। ছোলা উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ ভারত থেকেও আমদানি হয়েছে। এর বাইরে কানাডা, ইথিওপিয়া, ভুটানসহ ১৫টি দেশ থেকে ছোলা আমদানি হয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ছোলা আমদানি হয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ছোলা আমদানি হয়েছিল এক লাখ ৯৫ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, চলতি অর্থবছর শেষ হতে এখনও তিন মাস বাকি। তবে রমজানের ছোলা ইতিমধ্যে চলে এসেছে। তাই আগামী তিন মাসে তেমন ছোলা আমদানি হবে না। ফলে গতবারের তুলনায় এবার ছোলা আমদানি কমতে পারে।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, রোজার মাসে দেশে ছোলার চাহিদা ৮০ হাজার টন। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, রোজা উপলক্ষে পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি হয়েছে। তাই এই পণ্যটির দাম বাড়ার সম্ভাবনা আর নেই।
দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এখন কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ছোলা। রমজানের আগের সপ্তাহেও একই দাম ছিল। নতুন করে পণ্যটির দাম বাড়েনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের মালিক সোলায়মান বাদশা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছর রমজানকে কেন্দ্র করে ছোলার দাম ওঠানামা করে। এবার সেটা হয়নি। ছোলার দাম স্থিতিশীল রয়েছে।’
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ছোলার চাহিদা কম কেন জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী জানান, গত বছরের রোজার সময়ে করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির ছিল, তাই ছোলার চাহিদা ছিল কম। গতবার আমদানি করা অনেক ছোলা এখনও রয়ে গেছে। আর এবারও আমদানি বেশি হয়েছে। তাই ছোলার বাজার পড়তির দিকে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে এ বছর ভর্তুকিমূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বাড়িয়েছে টিসিবি। রমজান উপলক্ষে সংস্থাটি সাশ্রয়ী মূল্যে ২৬ হাজার ৫০০ টন ভোজ্যতেল, ১৮ হাজার টন চিনি, ১২ হাজার টন মসুর ডাল, ৮ হাজার টন ছোলা ও ৬ হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি করবে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। এসব পণ্য এখন বিক্রি হচ্ছে।